সম্পাদকীয়: Editorial ২০২৪-এর নির্বাচন মানুষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হোক গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ছবিটি সংগৃহীত গণতন্ত্র একপ্রকার বিপন্ন। গণ...
সম্পাদকীয়:
Editorial
২০২৪-এর নির্বাচন মানুষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হোক
গণতন্ত্র রক্ষার জন্য 
ছবিটি সংগৃহীত

গণতন্ত্র একপ্রকার বিপন্ন। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ টাকার কাছে বিক্রি। যারা সত্য তুলে ধরার কাজে নিয়োজিত ছিল তাদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আপনার সিদ্ধান্ত পারে দেশের এই ক্রান্তিকাল থেকে বাঁচতে।
পশ্চিমবঙ্গে গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পরে ছিল ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন। উভয় নির্বাচনে ফলাফল বিশ্লেষণ করে একটা বিষয় স্পষ্ট পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোট কমছে। বিশেষকরে এটা বিজেপি লক্ষ্য করেছে। তারা জানে হিন্দু ভোট তাদের দিকে ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই। বরং একটা বড়ো অংশের হিন্দু ভোট বিজেপি থেকে বিমুখ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই মোদি-অমিত শাহের কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রকট হতে পারে। সেজন্য পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি একটা বড়ো কোন ঘটনা চাইছে। তাদের একটাই লক্ষ্য ভোট ভাগাভাগি। হয় হিন্দু ভোট ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। না হয় মুসলিম ভোট দুভাগে ভাগ করে দিতে হবে।
এখন প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গে কিভাবে সম্ভব হবে? অন্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ অনেক সচেতন। এখানে সহজে দাঙ্গা সম্ভব না। পূর্বে এ চেষ্টা করেও খুব বেশি ফায়দা তুলতে পারেনি। বরং মুসলিম ভোটের একটা বড়ো শাসক দল তৃণমূলে চলে গেছে। অন্যদিকে দূর্ণীতির প্রশ্নে বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলোকে অপব্যবহার করছে বলে এর আগেই অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে অবিজেপি রাজ্যগুলোতে দূর্ণীতির বিরুদ্ধে অভিযানে যারা বিজেপিতে যুক্ত হচ্ছে তাদের সাতখুন মাপ। বিজেপি সারা ভারতে একটা বিরোধী শূণ্য রাজ কায়েম করতে চাইছে এ কথা অনেকের কাছে স্পষ্ট। যে কারণে কংগ্রেসের মত একটা সর্বভারতীয় দলকে ভেঙে ভেঙে অনেক আঞ্চলিক দল তৈরী করতে তারা পুরোপুরি সফল হয়েছে। সবাই জানে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা অনেক কঠিন। সেজন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো যতই বাস্তবতা উপলব্ধি করে 'ইন্ডিয়া' জোট গঠন করুকনা কেন প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নে তাদের মধ্যে বড়ো বাঁধা। এখানকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করছে না। তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন, কিন্তু কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। আসল বিষয়ে জন সাধারণ উপলব্ধি করতে পারছে না। দেশের ভোটের হিসাব বলছে ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ঐক্যবদ্ধ হলে বিজেপির হাল অনেকটাই খারাপ হবে। মাত্র ৩৭% জন সমর্থন বিজেপির পক্ষে, বিপক্ষে রয়েছে ৬৭% । এরপরেও যদি কেও বলেন বিজেপিকে ভালোবেসে জনগণ ভোট দিচ্ছে এটা ভুল। শুধু বিজেপি জেতার একটাই ফর্মূলা ভোট কাটাকাটি।
আগামী ২০২৪ এর নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে টার্গেট করেছে। তাদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গে ত্রিমুখী লড়াইয়ের পরিবেশ তৈরী করতে চাইছে। যদি সেটা সম্ভব হয় তবে পরাজিত হবে ধর্মনিরপেক্ষতা। জয়ী হবে কঠোর হিন্দুত্ববাদ, যার একমাত্র অস্তিত্ব আরএসএস-এর তৈরী করা মতাদর্শে। তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে না বৃহত্তর হিন্দু সম্প্রদায়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যদি উত্তর মালদা কেন্দ্রের মত ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তবে বিজেপির স্বপ্ন সফল হবে। উত্তর মালদা কেন্দ্রে তৃণমূলের মৌসুম নূর ভোট পান ৪ লক্ষ ২৫ হাজার, ইশা খান চৌধুরী ভোট পান ৩ লক্ষ ৫ হাজার, অন্য দিকে বিজেপির খগেন মুর্মু ভোট পায় ৫ লক্ষ ১০ হাজার। ৮৪ হাজার ৩ শো ভোটে জয় হয় বিজেপি প্রার্থীর। দুটি ধর্ম নিরপেক্ষ দলের মোট ভোট বিজেপির থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার বেশি। এই লোকসভা কেন্দ্রে মুসলিম ভোটার ৪৬%। শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ভাগাভাগি হওয়ার কারণে বিজেপি জয়লাভ করে। তবে যদি লড়াই এমন ত্রিমুখী হয় সেক্ষেত্রে বিজেপি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। সেজন্য এই লোকসভা ভোট হোক বিজেপির সংবিধানের উপর হামলার বিপক্ষে হোক। হোক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষ রক্ষার ভোট হোক। হোক গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার ভোট হোক। হোক সাধারণ জনগণের নথি নিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর বিপক্ষে হোক। এক বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতবর্ষের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার ভোট হোক।
COMMENTS