উপ-সম্পাদকীয়: Election 2024 চুপচাপ গণমাধ্যমগুলো, অনৈক্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর মধ্যে, এই পরিস্থিতিতে দেশকে বাঁচাতে পারে সাধারণ জনগণ ঘোষণা ...
উপ-সম্পাদকীয়:
Election 2024
চুপচাপ গণমাধ্যমগুলো, অনৈক্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর মধ্যে, এই পরিস্থিতিতে
দেশকে বাঁচাতে পারে সাধারণ জনগণ
ঘোষণা হয়েছে ভোটের নির্ঘন্ট। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নেমে পড়েছে। তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন সমীকরণ। একদিকে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের অস্তিত্ব রক্ষা। অন্যদিকে হিন্দু জাতিয়তাবাদের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য। ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরী করে মানুষকে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে রেখে দেশের সম্পদ চুপিসারে বিদেশে পাচার করে দেওয়ার পরও জনগণকে বোঝার সুযোগ না দেওয়া। সাধারণ মানুষের মূল সমস্যা থেকে দূরে সরিয়ে রেখে কাগজ নিয়ে ব্যস্ত রাখা। একটা সময় বলা হত সবকিছু ডিজিট্যাল হলে হয়রানি কম হবে। কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো পরিবেশ বিরাজ করছে। ক্রমে অতিষ্ট হয়ে উঠছে মানুষের জীবন। তাই তো একটা মুক্তির সূর্যের অপেক্ষায় এই দেশের সাধারণ জনগণ। লিখেছেন রাকিবুল ইসলাম
নির্বাচন ২০২৪ এর ঢাকে কাঠি পড়েছে। টিভির টকশো থেকে পাড়ার চায়ের দোকান সব জায়গায় তর্ক জমে উঠেছে। কেন্দ্র সরকার যখন একের পর বিরোধী দলগুলোকে কোন ঠাসা করছে ঠিক তখন সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে প্রকাশ্যে এল ইলেক্ট্রোল বন্ড। এদিকে সরকার জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য সামনে নিয়ে এল সিএএ।এত সব ঘটনার মাঝে সকলে মনে একটাই প্রশ্ন দেশের গণতন্ত্র বেঁচে থাকবে তো! ২০২৪শে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরাটা সহজ হবে যদি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে। তবে সাধারণ জনগণ যে বিজেপিকে চায় না তা গত ২০১৯ এর ভোটের শতকরা হার দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রদত্ত ভোটের মাত্র ৩৭ শতাংশ বিজেপির ভোট। তাহলে বিপক্ষে আছে ৬৩ শতাংশ ভোট। এই বিপক্ষে থাকা ভোট গুলো বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়ার ফলে বিজেপির ফায়দা হাসিল করতে সহজ হচ্ছে।
সাধারণ জনগণ শুধুমাত্র কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করে। অবশ্যই তাকে তার এই মূল্যবান ভোটের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একমঞ্চে এসে 'INDIA' নামে জোট করলেও কার্যক্ষেত্রে তারা অনেকাংশে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলনা। ফলে বিজেপি বিরোধী ভোট গুলো ভাগ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে কতটা বাঁচাতে পারবে ধর্মনিরপেক্ষ জনগণ সে কথা সময়ই বলবে।
সর্বভারতীয় দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বারবার ভেঙে তৈরী হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা একটা দল আজ অনেকটাই অগোছালো। রাহুল গান্ধী 'ভারতজোড়ো' অভিযানের মাধ্যমে কিছুটা মেরামতের চেষ্টা করলেও ভোট কাটাকাটি আর আসন রফার অঙ্কে বিজেপি থেকে অনেকটা পিছিয়ে আছে কংগ্রেস। বিরোধী দলের নেতাদের ইডি দিয়ে যখন হয়রানি করা হচ্ছে তখন ইলেক্ট্রোল বন্ড নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় বিজেপি। তবুও সাধারণ মানুষ এই বন্ড-ফান্ড নিয়ে বেশি ভাবতে পারে না। সেজন্য এদেশের জনগণের কাছে বিজেপির সহজ রাজনৈতিক ফর্মূলা জাতপাতের রাজনীতি করে ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করে। বিজেপির এই ফর্মূলা ইতিপূর্বে অজ্ঞ সাধারণ মানুষ বেশ ভালোই খেয়েছে। সেজন্য রাম মন্দির, জ্ঞানবাপি পরে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুসলিম ব্যতিত অন্য নাগরিকদের প্রতিবেশী দেশ থেকে এলে নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন পাশ করা হয়।
বিজেপির বিদ্বেষমূলক নীতি ইদানিং খুব বেশী কাজ দিচ্ছে না। তবুও বিজেপিকে পরাস্ত করার মত কৌশল রপ্ত করতে পারছে না বিরোধীরা। বিজেপি কোটি কোটি টাকা দিয়ে মিডিয়া হাউজগুলো কিনে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে লাগাচ্ছে। উল্টে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কিছু সুবিধাবাদী নেতা-নেতৃ ভোট পরবর্তী সমীকরণে বিজেপির থেকে মোটা টাকায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এটা একটা নেতিবাচক দৃষ্টান্ত।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাধারণ মানুষকে। দেশের জনগণের পরস্পরের মধ্যে একটা হিংসার পরিবেশ তৈরী করে দেশ শাসনের যে পদ্ধতি বিজেপি নিয়েছে তা এবার রুখে দিতে হবে। প্রথম কাজ হল সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাবাতে হবে তার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপির বিরুদ্ধে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা প্রার্থীকে অবশ্যই ভোট দিতে হবে। কারণ এই নির্বাচনে দেশের সংবিধান টিকে থাকার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীজী বলছেন বিজেপি একাই ৩৭০ এবং এনডিএ ৪০০ আসন পাবে। আর এটা যদি জনগণ সত্যি প্রমাণ হতে দেয় তবে জনগণকেই পস্তাতে হবে। দেশে জাতিভেদ প্রথার মত কালো দিন ফিরে আসবে। মানুষকে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হবে 'নোট বন্দির' মত তুঘলকি কান্ডের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর জন্য। একদিকে সাধারণ মানুষের আয় কমতে থাকবে আর নেতা মন্ত্রীদের অর্থের পাহাড় তৈরী হবে। দারিদ্রতা বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ, শিক্ষায় সমানাধিকার, সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিসেবা এগুলো যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
COMMENTS