রম্য রচনা: লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ বিবেকের মৃত্যু আমি ভালো থাকতে চাই, তাই তো আর কারও কথা ভাববার মতো অবকাশ আমার হাতে নৈই। এমনটাই আমাদের যদি ...
রম্য রচনা:
লোকসভা নির্বাচন ২০২৪
বিবেকের মৃত্যু
আমি ভালো থাকতে চাই, তাই তো আর কারও কথা ভাববার মতো অবকাশ আমার হাতে নৈই। এমনটাই আমাদের যদি ভাবনা হয় তবে এক ভয়ঙ্কর দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে আমাদের দেশ। লিখেছেন রাকিবুল ইসলাম।
সবাই দেখছে অবিচার হচ্ছে, অনাচার চলছে, তবুও সবাই চুপ করে হজম করে যাচ্ছে। বলা হয় নাকি দিনকে দিন মানুষের হজম শক্তি কমে যাচ্ছে, কিন্তু আজ কোন অন্যায় চোখের সামনে দেখে বেমালুম হজম করে দিচ্ছে! একেবারে জনগণ থেকে আদলত সকলেই কেমন যেন নিরবতা পালনে রত। যেমন কারও মৃত্যু হলে ঘটা করে নিরবতা পালন করা হয়! আজ বিবেক নামক শক্তিটি কফিনের মধ্যে লাশ হিসেবে বন্দি হয়ে আছে। তাইতো সবাই ব্যস্ত মৃত বিবেকের শান্তি কামনায়!
সেদিন প্রকাশ্য রাস্তায় যখন নিম্নবর্ণের ছেলেটির গায়ে উচ্চ বর্ণের ছেলেটি প্যান্টের চেইন খুলে প্রস্রাব করে দিয়েছিল সবাই দেখে ছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদে এগিয়ে আসেনি। হয়তো অনেকে ভুলেগেছে কাশ্মীরের আট বছরের আসিফার কথা! ছোট্ট একরত্তি মেয়েটিকে মন্দিরের মধ্যে কিছু নরখাদক যৌন উত্তেজনাকর ওষুধ খাইয়ে পাশবিক নির্যাতন করে মেরে ফেলে! সবচেয়ে অবাক হতে হয় জম্মু বিধানসভায় ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে বিজেপি বিধায়কদের মিছিল দেখে! উত্তর প্রদেশের শাসক দলের নেতার ছেলে হাতরসের কাহিনী এখন গল্পে, কিন্তু সুবিচার অধরা। এখনও উন্নাও কান্ডের দোষীদের শাস্তি দিতে পারেনি দেশের আইন। পুলওয়ামা ঘটনার নেপথ্য কাহিনী আজও কেউ জানতে পারল না। তবরেজ, জুনাইদ, আফরাজুলদের পরিবার এখনও সুবিচারের আসায় হয়তো আদলতের পানে চেয়ে আছে! রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা কোন রাজনৈতিক দল যখন কোটি কোটি টাকার গোপন বন্ড কিনে নিজের পার্টি ফাণ্ড মজবুত করে, আর দ্রব্যমূল্য অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে চলে তখনও সবাই চুপ! কেন্দ্রের শাসকের বিরোধী দলে দূর্নীতিগ্রস্ত হলে ইডির হানায় জেরবার হতে হবে, আর কেন্দ্রীয় সরকারের দলে আশ্রয় নিলে একেবারে গঙ্গা জলে ধোয়া! সরকার তুঘলকি ফতোফা জারি করে যখন রাতারাতি ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট অচল তখন নোট জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে শতাধিক লোকের জীবন দিতে হল। নষ্ট হল রোজ আনা রোজ খাওয়া লোকগুলোর দৈনিক উপার্জন। না, আমরা তখনও স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভাবছিলাম দেশ তরতর করে এগোচ্ছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল জনগণ ভোগান্তির মধ্যে থাকলেও কালো ধনের মালিকেরা সরকারের আধিকারিকদের দিয়ে মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছে। সাধারণ জনগণের ব্যাঙ্কে একাউন্ট খুলিয়ে বছর বছর ফাইন গুণে জেরবার! এর পরও চুপ করে সবকিছু দেখছি সবাই, কারণটা যে বিবেক নামক শক্তি আজ কফিনে যে বন্দী।
গালভরা বুলি দিয়ে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম। একে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে শাসকের দণ্ড। মিডিয়া হাউজ গুলো গ্লামারাস লাইফস্টাইলের জন্য হাত পেতে ভিক্ষা করছে শাসকের কাছে। আজ বারবার উঠে আসছে দু'টাকার সাংবাদিকের কথা। মানুষের মন মগজ থেকে আসল বিষয়ে থেকে অন্য দিকে মোড় ঘুরিয়ে রাখায় এরা দক্ষ। রাষ্ট্র যখন সামগ্রিক ভাবে ব্যর্থ তখন বিনোদন জগতের কাহিনীতে ভরে উঠছে খবরের পাতা বা টিভির স্ক্রীন কিংবা ডিজিটালের পেজ।
সবকিছু চোখের সামনে দেখার পর যদি বিবেকের দুয়ার বন্ধ করে অন্ধ হয়ে পড়ে থাকা হয় আর সুবিচার-সুশাসন চাই বলে ঘরে বসে মুখে ফেনা তোলা হয় তবে কিন্তু কোনদিনই সুবিচার, সুশাসন ফিরবে না। অবশ্যই জনগণের শেষ প্রচেষ্টা ভোটিং মেশিনের বোতাম সেখানে তার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি চাই।
COMMENTS