সম্পাদকীয়: বাংলাদেশ Editorial: গণ বিপ্লবের বাংলাদেশ একটা শাসককে ক্ষমতা থেকে নামাতে যে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না তা দেখিয়ে দিল এ...
সম্পাদকীয়: বাংলাদেশ
Editorial:
গণ বিপ্লবের বাংলাদেশ
একটা শাসককে ক্ষমতা থেকে নামাতে যে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না তা দেখিয়ে দিল একটা জাতি। জনগণ যখন মৃত্যু ভয়কে জয় করে ফেলে তখন পৃথিবী জয় করা তার কাছে আর কঠিন থাকে না। এই কাজটি করে দেখালো বাংলাদেশের ছাত্র জনগণ।
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিবর্তন হয়ে গেল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে! বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ পথে নেমে ছিল দেশে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে তা সংস্কারের দাবি নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম অবস্থায় কড়া হাতে এই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রের প্রাণ যায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে। বহু ছাত্র নিখোঁজ হয় এবং পুলিশ গ্রেফতার করে মামলা দেয় বহু সংখ্যক ছাত্রদের। নিরস্ত্র ছাত্রদের এই মৃত্যু ছাত্র জনতার মেনে নিতে পারেনি। ছাত্রদের দাবী ছিল এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোন রকম নমনীয় হতে দেখা যায়নি। প্রথমে তিনি হাইকোর্টে বিচারাধীন বিষয় বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জরুরী ভিত্তিতে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরামর্শ পেশ করে। ছাত্ররা প্রথম দাবী জানায় হত্যার বিচারের দাবিতে অনড় থাকে। শেখ হাসিনা ছাত্রদের এই বিক্ষোভকে সন্ত্রাসীদের কাজ বলে আখ্যায়িত করে। ছাত্রদের সমনে থাকে দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের হয়রানির দৃশ্য তাদের সামনে ছিল।তারা দেখে আসছিল কিভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা তার মতের বিরুদ্ধে যাওয়া ব্যক্তিদের বিভিন্ন নির্যাতনের কাহিনী। সরকারের কোন নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে প্রশাসনের লোক তাকে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিতো। মানুষের বাকস্বাধীনতা এক প্রকার কেড়ে নিয়ে ছিল। কুখ্যাত আয়নাঘরের ভয়ঙ্কর অত্যাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা এই নির্যাতন নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। এই ঘটনা গুলো ছাত্রদের তাড়া করে ফিরছিল। তাদের আশংকা ছিল যদি সরকার এই আন্দোলন ভাঙতে পারে তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের নির্মম নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে। সেজন্য তারা এই আন্দোলন থেকে পিছু হটার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা ধরেই নিয়েছিল সরকারের সঙ্গে বসা মানেই মৃত্যু।
ছাত্রদের কর্মসূচীর পরিবর্তন হতে থাকে দ্রুত। তারা তাদের সমস্ত দাবী দাওয়া ত্যাগ শুধুমাত্র শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবীতে ঢাকা অভিযানের ডাক দেয়। সরকার পক্ষও দ্রুত সিদ্ধান্ত বদল করতে থাকে। সরকার সেনা মোতায়েন করে কার্ফু জারি করে দেয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষদের পথে নামার আহ্বান জানান। ছাত্রদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পথে নেমে আসে সারা দেশের মানুষ। ছাত্রদের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। শেষপর্যন্ত সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে নিরাপদে দেশ ত্যাগের সুযোগ করে দেয়।
একটা দেশের একটা ছোট্ট ইস্যু নিয়ে তৈরি হওয়া আন্দোলন দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন ব্যবস্থাকে তাসের ঘরের মত ভেঙে দেয়। তবে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে বাংলাদেশের ছাত্র জনতাকে যত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তার থেকে বেশি পরিশ্রম করতে হবে একটা স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার করতে। তাই ছাত্রদের এ আন্দোলন এখানে শেষ বলা যাবে না।
COMMENTS