উপসম্পাদকীয়: Bangladesh : বাংলাদেশের ছাত্র -জনতা গণ অভ্যুত্থানে আমাদের গণমাধ্যম গুলোর দ্বিচারিতা আন্তর্জাতিক মানে অনেক নিচে ভারতীয় সংব...
উপসম্পাদকীয়:
Bangladesh :
বাংলাদেশের ছাত্র -জনতা গণ অভ্যুত্থানে
আমাদের গণমাধ্যম গুলোর দ্বিচারিতা
আন্তর্জাতিক মানে অনেক নিচে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। যদিও সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। তাদের মন যোগানো খবর তৈরীতে ব্যস্ত আমাদের সংবাদ মাধ্যম। সম্পর্ক পকেটের সঙ্গে। সাংবাদিকতার মত একটা দায়িত্বপূর্ণ পেশা আজ সবচেয়ে হাস্যকর পেশায় পরিনত হয়েছে। সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ল বাংলাদেশের গণবিপ্লবের ফলে সেদেশের সরকার পতনের ফলে।
রাকিবুল ইসলাম
প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যতেষ্ট উদ্বেগজনক। ছাত্র-জনতা বিক্ষোভের মুখে পতন ঘটেছে সে দেশের গণতন্ত্র হরণকারী একনায়কতন্ত্রী শাসক শেখ হাসিনার। জনগণ পুলিশের বুলেট এবং সেনাবাহিনীর কার্ফু উপেক্ষা করে পথে নেমে শত শত প্রাণের বিনিময়ে এই বিজয় লাভ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছুটা অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে দেশটিতে। এখনও প্রশাসন ঠিকঠাক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জায়গায় প্রাক্তন শাসকের সমর্থকদের বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। এমনকি আনেক পূর্বের সরকারের সমর্থকদের জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছে। কারো কারো জীবনহানি ঘটেছে। যদিও এগুলো কাম্য ছিল না। এই পটপরিবর্তনের সময় দেখা যায় অনেকক্ষেত্রে ধান্দাবাজ সুযোগসন্ধানী বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। বিশেষত কোন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হয়রানির স্বীকার হতে হয়। নতুন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় বিষয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যাতে দুষ্কৃতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে তার জন্য পাহারার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তিত্বরা এবং জনপ্রিয় ইসলাম প্রচারকরা বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের। তারা স্মরণ করিয়ে দেন হজরত মুহাম্মদ (সঃ) বাণী। যেখানে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, যদি কোন অমুসলিম মুসলমানদের দ্বারা নির্যাতিত হয়, শেষ বিচারের ময়দানের তিনি নির্যাতিত অমুসলিমদের পক্ষ নিয়ে দাঁড়াবেন।
বাংলাদেশ ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে পর থেকে আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষত কিছু ইলেকট্রনিকস মিডিয়া তাদের সংবাদ পরিবেশনের ধরণ এমনটা যেন ওপারে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ভয়ানক নির্যাতন হচ্ছে আর এপারের জনগণ বসে বসে দেখছে। তারা ভুলেগেছে এপারেও যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে! তাদের জীবন সংশয় হতে পারে! তাদের উত্তেজনাকর সংবাদ পরিবেশন একটা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে একটা ক্ষমতা ছেড়ে পালায়ন করা শাসক আর বিদ্রোহী ছাত্র-জনগণের গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে কোন রকম ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হয়নি। সেজন্য দেখাগেছে এই উন্নত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের অবস্থান আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম স্বাধীনতা সূচক-২০২৪-এ ১৮০ টি দেশের মধ্যে একেবারে তলানিতে ১৫৯। এদেশের সাংবাদিকদের কাছে সম্ভবত এই পেশাকে শুধুমাত্র পেট চালানো পেশা বলে মনে করা হয়। সেজন্য বেশিরভাগ সংবাদ কর্মীরা এবং মিডিয়া হাউস কেমন সংবাদ পরিবেশন করলে জনগণ খাবে সেই চেষ্টা করা হয়। সেখানে সত্যাসত্য যাই থাকনা কেন! লক্ষ্য থাকে একটাই এই খবর পরিবেশন করে কতটা মার্কেটিং করা যাবে। কয়েক বছর আগে একবর সাইক্লোনে দীঘার রিপোর্ট করতে গিয়ে এক ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকদের দীঘার রাস্তার উপর হাঁটু জলে সাঁতার কেটে হাবুডুবু খেতে খেতে খবর করতে দেখা যায়। এই তো আমাদের সংবাদ মাধ্যম!
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে ভয়ঙ্কর সব মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনে বিরক্ত হয়ে সেখানকার জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক সংবাদ মাধ্যমে তার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারবার যে চিত্র ধরা পড়ছে তা এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সেখানকার মুসলিমরা হিন্দুদের মন্দিরের নিরাপত্তা দিচ্ছে। ইতিপূর্বে দেখা গেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা মন্দির ভাঙচুর করে দোষ চাপিয়েছে ছাত্রশিবিরের উপর। সেই সুযোগ যাতে না পায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে সুশীল সমাজ। 'সংবাদ মাধ্যম' যাকে দেশের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় সেটা যখন বিশ্বস্ততা হারায় তখন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের উপর একটা ন্যারেটিভ তৈরী করা হয়েছে তারা হিন্দু বিদ্বেষী। এই ন্যারেটিভ তৈরীর পিছনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা ছিল বেশি। আর এই ধর্মীয় মৌলবাদ দমনের নামে দীর্ঘদিন সমাজের চিকিৎসক, আইনজীবী, সংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের উপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। খুন-গুম করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার কারণে এই জুলুম নির্যাতন বৈধ বলে দেখানো এদেশে সংবাদ মাধ্যম গুলোতে। আইনের নামে প্রহসনের বিচারের সমাজের গুণী ধার্মীক ব্যক্তিত্বদের ফাঁসির পক্ষে সংবাদপত্রে স্টোরি লেখা হয়েছে। কিন্তু সেদেশের স্বৈরাচারী সরকার 'আয়না ঘরে' সরকারের নীতির সমালোচনাকারীদের বছরের পর বছর নির্মম নির্যাতন করেছে এ নিয়ে কোন স্টোরি প্রকাশ পায়না। এখনও পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনা পরবর্তী বাংলাদেশে ততটা বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়নি যতটা লক্ষ্য করা গিয়েছিল ২০২২শে গণ বিক্ষোভের মুখে পড়া শ্রীলঙ্কার তৎকালীন সরকারকে। মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং রাস্তায় নেমে আসেন। এরপর তারা প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর দখল করেন। এমন অবস্থায় প্রতাপশালী প্রেসিডেন্টে গোতাবায়া রাজপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন। চারিদিকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রচুর হতাহত হয়। কিন্তু তখন আমাদের সংবাদ মাধ্যমের পূর্ণ সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে অভ্যুত্থানকারীদের প্রতি। ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। এটাই দ্বিচারিতা। শ্রীলঙ্কা ছিল বৌদ্ধ এবং হিন্দু প্রধান প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সেখানকার জনগণের অভ্যুত্থান বৈধ! আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ দুটি মুসলিম প্রধান এখানে মৌলবাদের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে! এই অদ্ভুত ন্যারেটিভ যে অচল সেটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র এদেশের সংবাদ মাধ্যমের অবস্থান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
COMMENTS