বিশেষ প্রতিবেদন: বিনোদন তেলেঙ্গানা কংগ্রেস সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষোভের ঝড় বিতর্কিত 'রাজাকার' সিনেমাকে পুরস্কৃত করায় তেলেঙ্গানা কং...
বিশেষ প্রতিবেদন: বিনোদন
তেলেঙ্গানা কংগ্রেস সরকারের সিদ্ধান্তে
ক্ষোভের ঝড় বিতর্কিত 'রাজাকার' সিনেমাকে পুরস্কৃত করায়
তেলেঙ্গানা কংগ্রেস সরকার ‘গদ্দার চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২৪’-এ ‘রাজাকার: সাইলেন্ট জেনোসাইড অফ হায়দ্রাবাদ’ ছবিটিকে সেরা ঐতিহাসিক, ঐতিহ্য, পরিবেশভিত্তিক চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত করায় তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যয় অনলাইন ডেস্ক:
তেলেঙ্গানা কংগ্রেস সরকার ‘গদ্দার চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২৪’-এ 'রাজাকার: সাইলেন্ট জেনোসাইড অফ হায়দ্রাবাদ' ছবিটিকে সেরা ঐতিহাসিক, ঐতিহ্য, পরিবেশভিত্তিক চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত করায় তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার থেকে এমন একটি সিনেমাকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে দলের ভেতরেই তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেক নেতা একে দলের আদর্শের পরিপন্থী বলে মনে করছেন।
মূল কারণসমূহ ও বিতর্কের পটভূমি:
সিনেমার প্রযোজক BJP নেতা গুদুর নারায়ণ রেড্ডি, যিনি আগে কংগ্রেসে ছিলেন। তিনি দাবি করেন, তার দাদু রাজাকারদের নির্যাতনের শিকার হন—এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই চলচ্চিত্রের মূল অনুপ্রেরণা।
ছবির বিপক্ষে অভিযোগ:
ছবিটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নির্মিত। এই ছবিতে রাজাকার বাহিনীকে কেবল হিন্দুদের দমনকারী মুসলিম গোষ্ঠী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
এই ছবিতে বারবার বিভিন্ন অসত্য এবং বিতর্কিত সংলাপ মানুষের মনে বিদ্বেষ তৈরি করবে। যেমন 'ধর্ম পরিবর্তন করো, না হলে রাজ্য ছাড়ো', সমাজকে বিভক্ত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
সিনেমাটির বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ উঠেছে ইতিহাসকে হিন্দুত্ববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিকৃতভাবে তুলে ধরেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সমালোচনার মূল কারণ:
স্বাধীনতা-পরবর্তী হায়দ্রাবাদে শুধু রাজাকার বাহিনীর নয়, অপারেশন পোলো’র পর হাজার হাজার সাধারণ মুসলিমের হত্যা করা হয়।সুন্দরলাল কমিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আনুমানিক ২৭,০০০–৪০,০০০ জন মুসলিম সম্প্রদায় মানুষকে হত্যা করা হয়।
BBC-এর একটি ডকুমেন্টারিতেও দেখানো হয় কিভাবে মুসলিম পাড়া লুট ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সিনেমাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মুসলিম গণহত্যার একটিও কথা উল্লেখ করেনি, বরং হিন্দু নির্যাতনের দিকটি অনেকাংশে অসত্য ভাবে তুলে ধরেছে।
তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহকে উপেক্ষা:
তৎকালীন রাজ্যের মূল সংঘাতের সূচনা ছিল জমিদার-বিরোধী কৃষক আন্দোলন, যা নেতৃত্ব দিতেন পিছিয়ে পড়া ও আদিবাসী জনগণ।
রাজাকাররা ছিল সেই কৃষক বিদ্রোহ দমন করার এক অংশ। কিন্তু সিনেমাটি পুরো বিষয়টিকে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বে নামিয়ে এনেছে। মানুষের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও প্রতিক্রিয়া:
ছবিটি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মুক্তি পায়, পূর্বে ২০২৩-র রাজ্য নির্বাচনের সময় মুক্তির পরিকল্পনা ছিল।
এর আগে ‘কাশ্মীর ফাইলস’ এর মতো এ ছবিকেও বিজেপির ইতিহাসচর্চার হাতিয়ার বলা হচ্ছে। আদতে বিজেপি ধর্মীয় বিভাজনের কাজ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাকরে
কংগ্রেসের অনেক নেতাই এই পুরস্কার প্রদান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, এবং দলীয় মহলে এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এই চলচ্চিত্রের পুরস্কার প্রাপ্তি শুধু সিনেমার গুণগত মান নয়, বরং ইতিহাসকে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার অভিযোগ বহন করে। বহু বিশ্লেষকের মতে, এটি ঐতিহাসিক সত্যকে আড়াল করে, বিভাজন তৈরি করছে এবং ভারতীয় সমাজের অন্তর্নিহিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
COMMENTS