News Brief: এই রাজ্য গরু পাচারকারী সন্দেহে এই বাংলায় সংখ্যালঘুদের প্রকাশ্যে ভয়ঙ্কর নির্যাতনে বিজেপির যুব নেতা উগ্র বিজেপির নেতা কর্মীরা ...
News Brief: এই রাজ্য
গরু পাচারকারী সন্দেহে এই বাংলায় সংখ্যালঘুদের প্রকাশ্যে ভয়ঙ্কর নির্যাতনে বিজেপির যুব নেতা
উগ্র বিজেপির নেতা কর্মীরা বর্ধমানের দুর্গাপুরে গরু নিয়ে যাওয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের উপর চড়াও হয়ে নির্মমভাবে অত্যাচার করে। সোস্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে।
প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক, ২রা আগষ্ট:
এবার পশ্চিমবঙ্গে গজিয়ে উঠল বিজেপির স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী! হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের দূর্গাপুর সেই হাড় হিম করা দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকলো। দুজন বয়স্ক ব্যক্তিকে ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতন করে সোস্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে। বর্তমানে অভিযুক্তদের কয়েকজন পুলিশ হেফাজতে। তবে প্রধান অভিযুক্ত পলাতক।
ঘটনাক্রম:
বুধবার (১ আগস্ট) সকালে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের ফরিদপুর এলাকার গ্যামন ব্রিজ সংলগ্ন অঞ্চলে দুইজন বয়স্ক ব্যক্তি গরু নিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ একদল মানুষ তাঁদের ঘিরে ধরে।
অভিযোগ, স্থানীয় বিজেপি ঘনিষ্ঠ কিছু যুবক তাঁদের ‘গরু পাচারকারী’ বলে চিহ্নিত করে —
গায়ে হাত তোলে কান ধরে হাঁটায় রাস্তায়
এবং দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে জনসমক্ষে।
পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ভিডিও করা হয় এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, একদল ব্যক্তি দুই বয়স্ক মানুষকে ঘিরে তীব্র ভাবে অপমান করছে, মারধর করছে এবং বিজেপির নাম করে হুমকিও দিচ্ছে।
নির্যাতিতদের বক্তব্য:
নির্যাতিত দুই ব্যক্তির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে—
"আমরা কৃষিকাজে গরু নিয়ে যাচ্ছিলাম। কোনো পাচারের প্রশ্নই নেই। কিন্তু আমাদের ধর্ম ও পরিচয় দেখে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হয়েছে।"
এছাড়াও এলাকাবাসীর একাংশ জানান, এই দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই কৃষিকাজে গরু ব্যবহার করে থাকেন। অথচ তাদের আচমকা এইভাবে গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায়।
পুলিশের পদক্ষেপ:
দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
তড়িঘড়ি পুলিশ দুজন অভিযুক্তকে আটক করেছে, এদের মধ্যে একজন স্থানীয় বিজেপি কর্মী বলে জানা গেছে — নাম উঠে এসেছে পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক বিজেপি যুবনেতার।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ভিডিও দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
এই ঘটনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তাদের প্রশ্ন—
"বিজেপি’র নাম করে এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া কি স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে? এ কোন ভারত তৈরি করা হচ্ছে?"
একটি গুরুতর প্রবণতা:
বিগত বছরগুলিতে ভারত জুড়ে ‘গোরক্ষা’ নামক একধরনের স্বঘোষিত অভিযান চালিয়ে নানা জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। দুর্গাপুরের ঘটনাটি সেই একই ধারা অবলম্বন করছে। এটি শুধু আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আঘাত।
প্রতিবাদ ও দাবি:
নাগরিক সমাজের তরফে দাবি উঠেছে—
নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে
এবং দলীয় পরিচয় যাই হোক, আইনের চোখে সবাই সমান — তা বাস্তবে প্রমাণ করতে হবে।
সম্প্রীতির প্রশ্নে নিরুত্তর বিজেপি:
ঘটনার পর বিজেপির তরফে এখনো কোনো স্পষ্ট বিবৃতি পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠছে —
এই ধরনের অপকর্মে যুক্তদের দলীয়ভাবে শাস্তি দেবে কি না বিজেপি?
নাকি নীরব সম্মতি দিয়েই তাদের কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে?
এই নীরবতা একপ্রকার নৈতিক দায় এড়িয়ে যাওয়া, যা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
দুর্গাপুরের ঘটনাটি একক ঘটনা নয়, বরং সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে বেছে বেছে নির্যাতন করার এক অশুভ প্রবণতার অংশ। আমাদের মনে রাখতে হবে—গরু, ধর্ম বা ভোটের জন্য মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা কখনো বলি হতে পারে না। এমন ভারত গড়তে হবে যেখানে আইন থাকবে সবার উপরে এবং সম্প্রীতি থাকবে সমাজের শিরায় শিরায়।
COMMENTS