ঝুড়ি ঝুড়ি নাম্বার ধুয়ে জল খাবে!

উপসম্পাদকীয়: আবু জুনাইদ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি বোর্ডের ফল প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক বোর্ডের, মাদ্রাসা বোর্ডের এবং উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড...

উপসম্পাদকীয়:

আবু জুনাইদ

পশ্চিমবঙ্গের তিনটি বোর্ডের ফল প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক বোর্ডের, মাদ্রাসা বোর্ডের এবং উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের। সব ক্ষেত্রেই যেন নাম্বারের ছড়াছড়ি। ছাত্র-ছাত্রীরা গাদা গাদা নাম্বার পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথা থেকে যাচ্ছে না এত নাম্বার দিয়ে কি হবে? বেশ কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা বোর্ড এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রত্যেকই পাল্লা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে চলেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা যখন অনেক অনেক নাম্বার নিয়ে আনন্দে মার্কশিট ফাইলবন্দি করে আর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তখন সত্যিই খুব ভালো লাগে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাওয়ার পর যখন এই ঝুড়ি ঝুড়ি নাম্বার বন্ধ ফাইল এর মধ্যে হাঁসফাঁস করতে থাকে তখন প্রচন্ড হতাশায় চুরমার হয়ে যায় সমস্ত স্বপ্ন।
পূর্বের সরকারের শেষের বছরগুলো থেকে শুরু হয়েছে এমন নাম্বার দেয়ার প্রবণতা। আর সেই প্রবণতা চরম ভাবে প্রকাশ পেয়েছে বর্তমান সরকারের সময়ে। আমার মনে হয় শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রীর ধারণা বা সরকারের ধারণা যদি পূর্বের বছরের থেকে এবছর ছাত্র-ছাত্রীদের নাম্বার কম দেয়া হয়, তাহলে হয়তো জনগণ বলবে যে সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার হাল খারাপ হয়ে গেছে। যদি গাদা গুচ্ছ নাম্বার দিয়ে প্রমাণ করতে হয় শিক্ষাব্যবস্থার হাল ভালো আছে তবে শিক্ষা ব্যবস্থা আগামী দিনে ঘোর সংকটে পড়বে এটা নিশ্চিত।
সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বেকারত্ব। ভাবতে কষ্ট হয় যখন একটা ডি গ্রুপে চাকরির জন্য অ্যাপ্লিকেশন জমা দেয় এমএ পাস কোন যুবক। কি রাজ্য, কি কেন্দ্র প্রত্যেক সরকারের কাছে বেকারত্ব নিয়ে সুচিন্তিত কোনো পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সরকারি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে কর্মী নিয়োগ সময়ের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতিক হারে চলছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সরল অনুপাতে বেড়ে চলেছে সুশিক্ষিত (ডিগ্রীধারী) বেকারের সংখ্যা। এই সময়ে একটা সরকারি চাকরি জোগাড় করতে পারা মানে হাতে চাঁদ পাওয়া। সরকার কি পারত না বেতন কাঠামোর রদবদল ঘটিয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে বহু সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করতে! এর ফলে কি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে কাজের গতি আসতো না, কমত নাকি বেকারত্ব! যদি বেকারত্ব কমানোর উপযুক্ত কোন রাস্তা বার করা যেত তাহলে হয়তো এই ঝুড়ি ঝুড়ি নাম্বার দেয়ার গুরুত্ব থাকতো!
খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যখন একটা শিক্ষিত ছেলে ঝুড়ি ঝুড়ি নাম্বার পাওয়া মার্কশিট সার্টিফিকেটগুলো ফাইলে নিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় একটা কাজের জন্য, আর খুব বেশি দূর এগোতে না পারা খুব ভালো পড়াশোনা করতে না পারা ছেলেগুলো যখন পড়াশোনা ছেড়ে কাঁচা পয়সা ইনকাম করতে  নেমে যায় আর জীবনটাকে উপভোগ করতে থাকে তখন সমাজের চোখে এই শিক্ষিত বেকার যুবকটা হয়ে যায় নিষ্কর্মা। কি দাম আছে তার ঐ সার্টিফিকেট গুলোর! কি দাম আছে এই একগাদা নাম্বারের। সেকি এই নাম্বার ধুয়ে ধুয়ে খাবে!