বিশেষ প্রতিবেদন: পবিত্র রমযানে জামাআতে ইসলামী হিন্দের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলাফায়ে রাশেদার যুগের ন্যায় এক অনুপম চিত্র ফুটে উঠেছে ইমরান ...
বিশেষ প্রতিবেদন:
পবিত্র রমযানে জামাআতে ইসলামী হিন্দের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলাফায়ে রাশেদার যুগের ন্যায় এক অনুপম চিত্র ফুটে উঠেছে
ইমরান হোসেন
কলকাতা থেকে ১৬০০ কিলোমিটার দূরে এবারের রমযান। দেশের রাজধানী দিল্লীর ওখলা-শাহীনবাগ এলাকায় রমযানের পরিবেশ বেশ স্বর্গীয় রংরূপে ভরা। এই এলাকা এখন বিশ্বপরিসরে পরিচিত। দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এইখানেই অবস্থিত। ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা শাহীনবাগ মানুষের মণিকোঠায় এখনও জীবিত আছে। আর সারা দেশজুড়ে ওখলার আবুল ফজল পরিচিত হয়ে উঠেছে জামাআতে ইসলামী হিন্দের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য।
![]() |
জামাআতে ইসলামী হিন্দের মারকাজ |
এখানে মোট ১৮ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে জামাআতের সুবিশাল কর্মস্থল। পশ্চিমবঙ্গের কোনো ছোট গাঁয়ের সঙ্গে জামাআতের এই বিশাল মার্কাজের সঙ্গে তুলনা করা যায়। একটি এলাকায় যা যা থাকার দরকার তার সবই এখানে দেখতে পাওয়া যায়।
![]() |
আল শিফা হসপিটাল |
এই ক্যাম্পাসের মধ্যে জামাআতের আল-শিফা মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, ৫ হাজার ইবাদতকারীর জন্য সুবিশাল ইশাত-ই ইসলাম মসজিদ, স্কুল, দ্বীনি মাদ্রাসা, সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হোস্টেল, অফিস, খেলার মাঠ, বিভিন্ন পরিবারের থাকার জন্য কোয়ার্টার ইত্যাদি।
![]() |
ইশাত-ই ইসলাম মসজিদের রমযানের চিত্র:
এখানের রমযান বেশ ভিন্ন প্রকৃতির। নিঃসন্দেহে আমরা উপবাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও পদ্ধতিতে সকলেই একসূত্রে বাঁধা। সে কলকাতা, দিল্লি বা দুনিয়ার অন্য কোন প্রান্তে। তবে স্থান,কাল ও পাত্র ভেদে বৈচিত্র গড়ে উঠে। এখানে সেহেরী কলকাতার তুলনায় একটু বিলম্বে হয়। সেহেরির সময়কার এই ক্যাম্পাসের চিত্র অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। ইলেকট্রিক লাইটের জ্বলজ্বলতায় সেহেরীর সূচনা হয়। কিন্তু এখানের আশেপাশের মসজিদ থেকে মাইকের আওয়াজ বা ডাকাডাকি কানে আসে না। বরং শুধুমাত্র একটি সাংকেতিক সাইরেনের মাধ্যমেই জানিয়ে দেওয়া হয় সেহেরী শুরু বা শেষ হয়ে গেছে। আরও কিছুক্ষণ পর বাতাসে আজানের সুর ভেসে আসে। এখানে ইশাত-ই ইসলাম মসজিদে নামাজ আদায়ের অভূতপূর্ব অনুভূতি তুলনাহীন। ফজর নামাজের শেষে পুরো রমজান জুড়ে মাওলানা রাজিউল ইসলাম নাদভী, মাওলানা মহিউদ্দিন গাজি এবং মাওলানা ওলিউল্লাহ ফালাহি সাহেবের ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত কুরআনের আলোচনা চোখে ঘুম আসতে দেয়না। প্রতিদিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত বিষয়কে তাঁরা বক্তব্যের বিষয়বস্তু করেন। রবিবার জোহর নামাজের পর ইশাত-ই ইসলাম শুরু হত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ইসলামী প্রশ্ন-উত্তর। যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার জন্য জামাআতে ইসলামী হিন্দের বিদগ্ধ পান্ডিত্যের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকতেন। এই পর্ব না শুনেই মসজিদ থেকে প্রস্থান করে এমন মানুষ খুব কমই ছিল। আসরের নামাজের পর ওইদিন রাতে তারাবির নামাজে পঠিতব্য পবিত্র কুরআনের সারাংশ বর্ণনা করা হয়।ইশাত-ই ইসলাম মসজিদ মহিলা ও শিশুদের বিশেষ ব্যবস্থা:
ইশাত-ই ইসলাম মহিলাদের ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত। মসজিদের উপরের অংশটাই পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। যে কোন সময়ে মহিলারা ইবাদাতের জন্য মসজিদের উপরতলায় নির্দ্বিধায় প্রবেশ করে। এখানে এক তুর্কি প্রবাদের কথা মনে পড়ে। “মসজিদে নামাজের সময় যদি পিছন থেকে শিশুদের কোলাহলের আওয়াজ শুনতে না পাও তাহলে তোমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিষয়ে সতর্ক হয়ে যাও।" ইশাত-ই ইসলাম ছোট্ট শিশুদের কোলাহলের গুঞ্জন উঠে। এই মসজিদে মহিলাদের আগমন খোলাফায়ে রাশেদার কথা মনে করিয়ে দেয়।শুক্রবার ইশাত-ই ইসলাম মসজিদের চিত্র:
শুক্রবার জুম্মার সময়ে জামাআতের ক্যাম্পাসের চিত্র পুরোটা বদলে যায়। চারিদিকে যেন সাজসাজ রব। দুপুর ১২ টা বাজতে না বাজতেই গাড়ি সারি বাঁধতে থাকতে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন পরিবারের সকলে মিলে ইশাত-ই ইসলাম মসজিদে প্রবেশ করছে। অন্যান্য এলাকার মসজিদে পবিত্র ঈদের দিনে যেমনটা হয়, এখানে প্রতি জুম্মার দিনে তেমনই পরিবেশ বিরাজ করে। এই মসজিদের অন্যতম আকর্ষণ জুম্মা খুৎবা। উর্দুতে প্রায় ৩০ মিনিটের বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য শুনতে লোক আগে থেকেই মসজিদের অন্দরমহল কানায় কানায় পূর্ণ করে । তারপর মসজিদের বাহিরের অংশ এবং সামনের সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া বাগিচায় জায়নামাজ বিছিয়ে লোক বসে যায়। ইফতারের পূর্ব মুহুর্তে একটি নিখাদ ইসলামী পরিবেশ বিরাজ করে এখানে। লোকজন তাঁদের প্রয়োজনীয় ইফতার সামগ্রী অদূরে শাহীনবাগ বাজার থেকে কিনে নিয়ে ফেরে। মসজিদে থাকে মুসাফিরদের জন্য ইফতারের আয়োজন। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই জামাআতের দফতরে কোন না কোন ইফতার মাহফিলের আয়োজন হয়েই থাকে, অমসুলিমদের নিয়ে, ছাত্রনেতাদের নিয়ে, শিক্ষাবিদদের নিয়ে, অন্যায়ভাবে জেলবন্দি ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। প্রিয় নবী(সঃ) এবং সাহাবায়ে কেরামগণ(রাযীঃ) যে সোনালি সমাজ গঠন করে গিয়েছিলেন তার ছোঁয়া পেতে পারেন জামাআতের এই ১৮ একর জমিতে।রমযানে নিয়মিত ইশাত-ই ইসলাম মসজিদের সূচী:
ইশাত-ই ইসলামিয়া মসজিদে পবিত্র রজমানের সূচি সঠিকভাবেই তুলে ধরেছেন আসিফ ইকবাল ভাই। আসিফ ভাইয়ের কলমে---১. প্রতিদিন বাদ ফজর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য -
ক) প্রথম ১০ দিন মাওলানা রাজিউল ইসলাম নাদভী।
খ) দ্বিতীয় ১০ দিন মাওলানা মুহিউদ্দিন গাজী।
গ) তৃতীয় ১০ দিন মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ সাঈদী ফালাহী।
২. প্রতিদিন আসর বাদ:
উক্ত দিন তারাবিতে পড়া হবে এমন সূরাগুলির সারাংশ উপস্থাপন।
৩. এশার নামাজ ও ২০ রাকাত খতম তারাবির সময়সীমা রাত ৮.৩০ থেকে ১০.৩০ টা।
৪. প্রতি রবিবার বাদ যোহর দেড় ঘণ্টা সাওয়াল জওয়াবের আশর।
৫. শেষের বেজোড় রাত্রিগুলোতে -
ক) তারাবির পর থেকে রাত্রি ১২.০০ টা পর্যন্ত ধারাবাহিক মুতালাআতুল কুরআন - সূরা মুমিন(৪০)
খ) ১২.১০ – ১.৩০ টা পর্যন্ত ধারাবাহিক ব্যক্তিত্ব উন্নয়নমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন সৈয়দ আমিন-আল হাসান। বিশেষত এই প্রোগ্রামটা ইতেকাফকারীদের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু বাইরের লোকেরাও উপস্থিত থাকতে পারে।
গ) তারপর মধ্যরাত ৩.০০ – ৩.৪৫ টা পর্যন্ত আট রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের জামাআত। উল্লেখ্য যে, পঠিতব্য সূরার মূখ্য আলোচ্য বিষয় ১ মিনিটের মধ্যে প্রতি দুই রাকাতের শুরুতে ইমাম সাহেব বলে দেন। সূরা হাশর, সূরা রহমান, সূরা ওয়াকিয়া, সূরা দাহর, সূরা কিয়ামাহ, সূরা মূলক প্রভৃতি সূরাগুলো এর রাতে পড়া হয়েছে।
ঘ) সাহরীর সময় ৩.৪৫ টা থেকে ৪.৩০ টা পর্যন্ত। সাহরী শেষ থেকে ২০ মিনিট পর ফজরের জামাআত।
সারা দেশ থেকে ইশাত-ই ইসলাম মসজিদে ইতেকাফে আছেন প্রায় ১০০ জন এবং জামাআতের দুই উস্তাদ মুহতারাম সৈয়দ আমিন-আল হাসান ও মাওলানা মুহিউদ্দিন গাজী। সম্পূর্ণ ইতেকাফের নেতৃত্বে দিচ্ছেন সৈয়দ আমিন-আল হাসান।∆
আবার ফিরুক
উত্তরমুছুনরাশেদার সেরা মুখ।