Editorial: RG Kar Hospital দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আর. জি. কর. মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ুয়া ডাক্তার মৌমিতা দেবনাথের পাশবিক নির্যাতনে...
Editorial: RG Kar Hospital
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
আর. জি. কর. মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ুয়া ডাক্তার মৌমিতা দেবনাথের পাশবিক নির্যাতনের নির্মম হত্যার প্রতিবাদে গোটা বাংলা পথে নেমেছে।
একবারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে চলচ্চিত্র জগত এবং খেলোয়ার সর্বস্তরের মানুষেরা পথে নেমেছে। এটা একটা অবশ্যই পজিটিভ দিক। তবে রাজনীতি নোংরা খেলায় নেমে যদি কেউ ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাই অবশ্যই সাবধান হতে হবে। গুজরাটে বিলকিস বানু, কাশ্মীরের আসিফা, উত্তর প্রদেশের হাথরস আর উন্নাওয়ের ঘটনায় এমন ভাবে পথে নেমে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন হত তবে হয়ত শাসকের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা খুনি-ধর্ষকরা এমন ঘটনা ঘটানোর আগে দু-বার ভাবত!
রাজ্যবাসী পথে নেমেছে আর.জি.কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌমিতা দেবনাথকে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে হত্যা করার প্রতিবাদে। অবশ্যই এই ঘটনায় আমরা প্রত্যেকেই বাকরুদ্ধ। একটা হসপিটালে যদি একজন ডাক্তার সুরক্ষিত না থাকে তবে রোগীর সুরক্ষা কিভাবে আশা করতে পারি! যে বা যারাই এই কান্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের অবশ্যই দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক এটা আমরা প্রত্যেকেই চাই। আমরা দেখতে চাই অপরাধীদের শাস্তি দেখে যেন মানুষ এমন চরম অপরাধ করার আগে দু-বার অন্তত ভাবে। অনেকে ইসলামের শাস্তির বিধানকে বর্বরতা বলে মনে করেন। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হল এই জুনিয়র ডাক্তার মৌমিতার উপর যে অত্যাচার হয়েছে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে তা ইসলামী বিধান অনুযায়ী হবে না তো! একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তা পাথর মেরে হত্যা করার মতো যদিও হয় তবে তাই করা প্রয়োজন সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করার জন্য।
প্রতিবাদের প্রসঙ্গ যখন এলো তখন এই একই সময়ে বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরাখণ্ডে একজন বেসরকারী হসপিটালের নার্সকে (৩০শে জুলাই , ২০২৪) অপহরণ করে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। এটা নিয়ে কিন্তু কলকাতার আন্দোলনকারীদের সমব্যথী হতে দেখা যাচ্ছে না। 'We want Justice for the Nurse' এ শ্লোগান শোনা যাচ্ছে না। একটা কারণ হতে পারে রাজ্যটা বিজেপি শাসিত আর ধর্ষিতা একটা বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের।
আপনাদের নিশ্চয় কাশ্মীরের (১০ জানুয়ারি, ২০১৮) আসিফার কথা মনে আছে। মাত্র আট বছরের একটা শিশুকে একদল নরপশু মন্দিরের মধ্যে যৌন উত্তেজক ওষুধ খাইয়ে লাগাতার কয়েকদিন ধরে পাশবিক অত্যাচার করে মেরে ফেলে। তোলপাড় হয়েছিল সারা দেশ। আর সারা দেশ দেখেছিল বিজেপির সমর্থকরা কিভাবে ধর্ষকদের পক্ষে মিছিল করেছিল। না এখনও সুবিচার পায়নি শিশুটির পরিবার।
আপনাদের আরও মনে থাকবে গুজরাট দাঙ্গায় গণধর্ষণের স্বীকার সন্তান সম্ভবা বিলকিস বানুর (২০০২) কথা। তার সামনে একে একে তার নিকটাত্মীয়দের হত্যা করা হচ্ছে আর তার উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে উল্লাস করা হচ্ছে। সেই অপরাধীদের গুজরাটের বিধানসভা ভোটের আগে জামিনে মুক্তি দিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার। আর বিজেপির সমার্থকরা মালা পরিয়ে মিছিল করে বীরের সম্মান দিয়েছে। এখনও বিলকিস বানু কেঁদে কেঁদে ফিরছে সুবিচারের আশায়!
উন্নাও কান্ডের (৪ জুন ২০১৭ সালে) কথা অবশ্যই মনে থাকবে। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভার ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য কুলদীপ সিং সেঙ্গার, একটি ১৭ বছরের দলিত কিশোরীকে ধর্ষণ করে। প্রমান লোপাটের জন্য হত্যা করে। অপরাধীর মাত্র ১২ বছর জেল হয়।
নিশ্চয় উত্তর প্রদেশের হাথরসের (১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২০) ঘটনা এর ঘটনা আপনাদের মনে আছে। ১৯ বছরের দলিত কন্যাকে ভয়ঙ্কর ভাবে গণধর্ষণ করা হয়। দুসপ্তাহ বাঁচার জন্য লাড়াই করে মারা যায়। অপরাধীরা বিজেপির আশ্রিত। না এখনও মৃতার পরিবার সুবিচার পায়নি।
এই ঘটনা আমাদের দেখায় অপরাধী যখন মানবতা বিরোধী চরম অপরাধ করার পর রাজনৈতিক আশ্রয় পায় তখন তাদের শাস্তি দান কঠিন হয়ে পড়ে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শাসকদল অপরাধীদের আড়াল করে তাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়।
সেজন্য আর. জি. কর কাণ্ডে যারাই বিচার চাইছি অবশ্যই এটা আমাদের জোরালো দাবি অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা। পাশাপাশি এ দাবিও উঠুক উত্তরাখণ্ডের নার্স, আট বছরের আসিফা, বিলকিস বানু, উন্নাও হাথরস প্রভৃতি হাড়হীম করা কাণ্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদেরও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে শাস্তি কার্যকর করা হোক।
COMMENTS