উপসম্পাদকীয়: রাজনীতি Bihar Voters’ Adhikar Yatra রাহুল গান্ধীর যাত্রা: বিহারের হৃদয়ভূমিতে আবারও ইন্দিরার প্রতিধ্বনি বিহারের রাজনীতির অভি...
উপসম্পাদকীয়: রাজনীতি
Bihar Voters’ Adhikar Yatra
রাহুল গান্ধীর যাত্রা: বিহারের হৃদয়ভূমিতে আবারও ইন্দিরার প্রতিধ্বনি
বিহারের রাজনীতির অভিজ্ঞ বিশ্লেষকরা লক্ষ্য করছেন যে রাহুল গান্ধী প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করছেন—যারা ঐতিহাসিকভাবে কংগ্রেসের সমর্থনের মূল স্তম্ভ।
নলিন বর্মা
একজন সাংবাদিক, লেখক ও গণমাধ্যম প্রশিক্ষক
জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘সাম্পূর্ণ ক্রান্তি’র উত্তেজনায় ভেসে গিয়ে ১৯৭৭ সালে বিহার ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকার ভাঙার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। অথচ, ইতিহাসের এক অদ্ভুত মোড়ে, একই রাজ্য ১৯৮০ সালে তাঁর বিজয়ী প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।
প্রবীণরা আজও স্পষ্ট মনে করতে পারেন ইন্দিরা গান্ধীর নাটকীয় বেলচি সফর—পাতনা থেকে ৯০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এক গ্রাম, যেখানে গণহত্যা হয়েছিল। চারপাশে ছিল বর্ষার জল আর লম্বা ঘাসের ঝোপ। তিনি হাতি চড়ে হাতজোড় করে পৌঁছেছিলেন, কপালে ছিল ঘোমটা, আর তিনি নীরবে প্রবেশ করেছিলেন গ্রামে।
টেলিভিশন বা ইন্টারনেটবিহীন সেই যুগে এই স্লোগান বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল, এবং কংগ্রেসের অবিশ্বাস্য পুনরুত্থানের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
আজ রাহুল গান্ধীর বিহার সফর অনেক দিক থেকেই তাঁর দাদীর সেই সফরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। যেমন ২০০৪ সালে বিহার অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারকে হারিয়ে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস-ইউপিএ-র দুই টানা মেয়াদের পথ খুলে দিয়েছিল, তেমনি ২০১৪-তে নরেন্দ্র মোদীর উত্থান কংগ্রেসের জন্য ১৯৭৭ সালের মতো বিপর্যয় ডেকে আনে।
আজ রাহুল এমন এক বিহারে সফর করছেন, যেখানে কংগ্রেসের অবস্থা নাজুক, অনেকটা যেমনটা ছিল ইন্দিরার আমলে। তবুও, তাঁর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ মানুষকে আবারো আশায় ভরিয়ে তুলছে।
রাহুল বনাম মোদী
এই বছর বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) এর কারণে ৬.৫ লক্ষ নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে যাওয়ায় জনরোষ তৈরি হয়েছে। হতাশা আর ভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে—এটি ‘রাহুল গান্ধী বনাম নরেন্দ্র মোদী’র লড়াই। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ক্রমেই আড়ালে চলে যাচ্ছেন, প্রায় নীরব ও অদৃশ্য।
স্থানীয়রা বলছেন, রাহুল গান্ধীর সভায় স্বতঃস্ফূর্ত ভিড় হচ্ছে, অথচ মোদীর সভাগুলো এখন অনেকাংশে সরকারি কর্মী আর দলের কর্মীদের উপর নির্ভরশীল। একসময় মোদীর সভাগুলোর যে স্বতঃস্ফূর্ত উন্মাদনা ছিল, তা আজ আর নেই।
তবে রাহুল শুধু মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হননি, তিনি জোটের রাজনীতিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর মঞ্চে জাতীয় জনতা দলের তেজস্বী যাদব, সিপিআই(এমএল)-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও বিকাশশীল ইন্সান পার্টির মুকেশ সাহানির মতো সহযোগীরাও সমান মর্যাদা পাচ্ছেন।
মোদীর সভাগুলি মূলধারার মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ পেলেও, রাহুলের যাত্রা সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে তুলনামূলকভাবে কম প্রচার পাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন—“বাস্তবতা অন্য কথা বলে। মানুষ রাহুল গান্ধীকে ভালোবাসে, আর নরেন্দ্র মোদীকে ভয় পায়।”
তখন ও এখন
আগামী নির্বাচনে তেজস্বী যাদবের মহাগঠবন্ধন নীতীশ কুমারের এনডিএ-কে সরাতে পারবে কি না, তা এখনই বলা কঠিন। কিন্তু এটুকু স্পষ্ট, রাহুল গান্ধী এ বার বিহারের কাদা-মাখা পথে নিজের ছাপ রেখে গেছেন।
এক নতুন রূপে রাহুলের আবির্ভাব ঘটেছে।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের সময় এই লেখক যখন বেলচি সফরে যান—সেই গ্রামেই ১৯৮০ সালে “ইন্দিরা কো বুলাইেঙ্গে” স্লোগান জন্ম নিয়েছিল—তখন গ্রামে রাহুল গান্ধীকে চিনতই না অনেকেই। কিন্তু আজ যদি কেউ বলে যে তিনি রাহুলকে চেনেন না, তাহলে মানুষ অপমান বোধ করেন।
রাহুলের এই যাত্রা বিহারের জনমনে দৃশ্যমান আশার সঞ্চার করেছে। তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল অনেক সময় এই আবেগকে প্রতিফলিত করেনি, তাই ভবিষ্যদ্বাণী করা এখনই ঝুঁকিপূর্ণ।
নলিন বর্মার এই লেখা অনলাইন The Wire -এ ২৩.০৮.২০২৫ তারিখ প্রকাশিত
COMMENTS