বিশেষ প্রতিবেদন: প্রাক্তন সাফাই কর্মীর হাড় হিম করা অভিযোগ কর্ণাটকের এক জনপ্রিয় মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ছবিটি প্রতীকি ১...
বিশেষ প্রতিবেদন:
প্রাক্তন সাফাই কর্মীর হাড় হিম করা অভিযোগ কর্ণাটকের এক জনপ্রিয় মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে 
ছবিটি প্রতীকি

১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে একের পর এক ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ঘটেছিল কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার ধর্মস্থলায়। নাবালিকা, স্কুলছাত্রী, তরুণী, কিশোরীদের অপহরণ করে যৌন নির্যাতনের পর খুন করা হত। তারপর দেহগুলি মাটি চাপা বা আগুনে পুড়িয়ে গায়েব করে দেওয়া হত। নিখোঁজ কন্যাদের পরিবারের কেউ কেউ থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও কিনারা করতে পারেনি।
প্রত্যয় পত্রিকা:
কর্নাটকের ধর্মস্থলা গ্রামের একজন প্রাক্তন সাফাইকর্মী অভিযোগ করেছেন, ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কর্ণাটকের ধর্মস্থলা গ্রামে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বহু ঘটনা ঘটেছে এবং সেগুলো পরিকল্পিতভাবে চাপা দেওয়া হয়েছে। "ধর্মস্থলা" হলো কর্ণাটকের একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির কমপ্লেক্স, এটি খুবই জনপ্রিয় ও ঐতিহাসিক কেন্দ্র। আর এই মন্দিরের বিরুদ্ধে তিনি ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে শতাধিক বিকৃত-বিবস্ত্র মেয়েদের মৃতদেহ পুঁতে বা পুড়িয়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি এখন পুলিশি নিরাপত্তা ও তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন।
“ধর্মস্থলা মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি-কর্মীরাই তাঁদের যৌন লালসা চরিতার্থ করতে স্কুল ছাত্রী, তরুণীদের তুলে আনত। আর সেই সব দেহ সৎকার করতে হত আমাকে। ২০১০ সালে ১২-১৫ বছর বয়সি একটা মেয়েকে মাটি চাপা দিতে হয়। তার ঊর্ধ্বাঙ্গে স্কুলের ইউনিফর্ম ছিল। নিচের স্কার্ট ও অন্তর্বাস ছিল না।” এমনই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি হাড় হিম করা তথ্য সামনে নিয়ে এসেছে কর্নাটকের জনপ্রিয় ওই শিবমন্দিরের প্রাক্তন সাফাইকর্মী।
অভিযোগের বিবরণ:
দক্ষিণ কন্নড় জেলার ধর্মস্থলা গ্রামের এক প্রাক্তন সাফাইকর্মী ৩ জুলাই থানায় অভিযোগ জানান। তিনি বলেছেন, জীবনের নিরাপত্তার কারণে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তিনি বহু ধর্ষিত ও খুন হওয়া নারীর মরদেহ পুঁতে বা পুড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। অনেক ঘটনাই তিনি নিজের চোখে দেখেছেন।
এই অভিযোগ মঙ্গালুরুর পুলিশ সুপার এবং ধর্মস্থলা থানায় জমা দেওয়া হয়। পরের দিন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর ধারা ২১১(এ)-এর অধীনে মামলা রুজু হয়। পুলিশ আদালতের অনুমতি নিয়ে অভিযোগকারী দেখানো স্থান থেকে দেহাবশেষ উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে।
ধর্ষণ ও হত্যা ঢাকার অভিযোগ:
অভিযোগকারীর দাবি, তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধর্মস্থলা মন্দির প্রশাসনের অধীনে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। শুরুতে নেত্রাবতী নদী এলাকায় পরিষ্কারের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি দেখতে পান, নারীদের বিবস্ত্র মৃতদেহ নদী বা আশপাশে পড়ে রয়েছে, অনেকের শরীরে যৌন নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন ও গলা টিপে হত্যার লক্ষণ ছিল।
তিনি জানান, যখনই তিনি এই কাজে আপত্তি জানান বা পুলিশে জানাতে চান, তখনই তাঁর ওপর চড়াও হয় কর্তৃপক্ষ। তাঁকে বলা হয়—
“তোকেও কেটে টুকরো করে দেব”, “তোর দেহও ওইসব মরদেহের মতো মাটির নিচে যাবে”, “তোর গোটা পরিবারকে মেরে ফেলব”।
তাঁর পূর্বসূরি কর্মীও একইভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলে জানান।
পালিয়ে থাকা ও আত্মগ্লানি:
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে অভিযোগকারীর পরিবারের এক নাবালিকা কিশোরীর উপর যৌন নির্যাতনের চেষ্টা হয়। এরপর তিনি পরিবারসহ ধর্মস্থলা ছেড়ে পাশের রাজ্যে পালিয়ে যান এবং বারবার পরিচয় বদলে বাস করতেন। প্রতিদিন আতঙ্কে থাকতেন, কখনও তাঁরাও খুন হয়ে যেতে পারেন।
সম্প্রতি, তিনি একাধিক সমাধিস্থল পরিদর্শন করে একটির দেহাবশেষ তুলে আনেন এবং ছবি ও আধার কার্ড, কর্মী পরিচয়পত্র-সহ পুলিশে জমা দেন। তিনি লিখেছেন—
“এই মৃতরা যেন সম্মানের সঙ্গে শেষ বিদায় পায়, তবেই তাদের আত্মা শান্তি পাবে এবং আমার পাপবোধও কিছুটা লাঘব হবে।”
দোষীদের নাম প্রকাশে নিরাপত্তা দাবি:
তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের মধ্যে মন্দির প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন। তিনি নাম প্রকাশ করতে চান, তবে ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন, ২০১৮’-এর অধীনে নিরাপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত তা করবেন না। তাঁর আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট কে.ভি. ধনঞ্জয়-এর কাছে একটি সিল করা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, যাতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত থাকে।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া:
পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে তারা অভিযোগ পেয়েছে এবং মামলা রুজু হয়েছে। তাঁরা তদন্ত করবে এবং দেহাবশেষ উত্তোলনের জন্য আদালতের অনুমতি চাইবে। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
অতীত প্রেক্ষাপট:
২০১২ সালে ধর্মস্থলায় এক প্রি-ইউনির্ভাসিটি (pre-university) শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাও সংবাদে এসেছিল। সে ঘটনায় একটি ইউটিউব ভিডিওতে মন্দিরের ধর্মধিকারীর (Dharmadhikari) নাম জড়িয়ে পড়ে এবং কোর্ট সম্প্রতি ভিডিওটি সরানোর নির্দেশ দেয়।
প্রতিবেদনের মূল লেখক: Preeja Aravind
প্রকাশিত হয়েছে: India Today
COMMENTS