সম্পাদকীয়: Editorial: R G Kar ও ডাক্তার! পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত ডাক্তারদের ধর্ণা স্থানে গিয়ে স...
সম্পাদকীয়:
Editorial: R G Kar
ও ডাক্তার!
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত ডাক্তারদের ধর্ণা স্থানে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন। তবুও অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা। তাদের দাবী লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে তাদের আলোচনার। এদিকে হসপিটাল গুলোতে উপচে পড়ছে রোগী, চিকিৎসা পরিসেবা ব্যহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান হোক।
আরজি করের ডাক্তার ধর্ষণ ও খুনের সুবিচার চেয়ে পথে রয়েছেন ডাক্তারা। তাদের দাবী শুধু তিলোত্তমার নৃশংস ভাবে ধর্ষণ ও খুনের বিচার চাওয়া নয়। এই সুযোগে তারা আরও কিছু দাবি আদায় করার আন্দোলন করছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের আলোচনার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরাসরি সম্প্রচারের দাবি মেনে না নেওয়ায় আলোচনায় অংশ নেয়নি ডাক্তারা। এদিকে ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে অনেকটা বিপর্যস্ত কলকতার হসপিটাল গুলো, বিশেষত আরজি করের মত ব্যস্ত হসপিটালের চিকিৎসা পরিসেবা লাটে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রোগীর মৃত্যু হয়েছে সঠিক চিকিৎসা পরিসেবার অভাবে। সকরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই বেহাল পরিস্থিতির জন্য দায় কার? এটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন!
অবশ্যই একটা রাষ্ট্রে জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তিনি প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি হন, সরকারী চাকুরীজীবী কিংবা ডাক্তার অথবা একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ যেই হোক না কেন সকলের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল অনেক ক্ষেত্রে একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবনকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। আরজি কর কান্ডের পর থেকে গোটা দেশে আরও বেশ কয়েকটি নৃশংস ঘটনা ঘটে গেছে। বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডে একজন নার্স হসপিটাল থেকে ফেরার পথে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। হরিয়ানায় বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিক সাবির মল্লিককে গো রক্ষকরা পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। গো রক্ষকরা পাঁচ কিলোমিটার ধাওয়া করে গরু পাচারকারী সন্দেহে গুলি করে হত্যা করার পর জানতে পারে খুন হওয়া ছেলেটি আদতে হিন্দু ছিল। যদিও গো রক্ষকদের লক্ষ্য ছিল মুসলমান হত্যা করা। উত্তর প্রদেশে পাওয়া গেল নৃশংস ভাবে গোটা শরীরে ক্ষত অবস্থায় ধর্ষিতার মুণ্ডুহীন দেহ। এমন ভয়ানক ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে।
গোটা দেশে এতগুলো ঘটনা ঘটেছে তবে সকলে পড়ে আছে শুধুমাত্র আরজি করের ডাক্তার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে। গোটা দেশের অন্যান্য ঘটনাগুলো এর সঙ্গে যোগ করে অবশ্যই গোটা দেশে যে অনৈতিকতার জঙ্গল রাজ কায়েম হচ্ছে তা থেকে অবশ্যই রক্ষার দাবি জানানো যেত। কিন্তু বিজেপি এটাতে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেখানে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলোর নিরাপত্তার অনেক তলানীতে অবস্থান করছে। এখন সময় এসেছে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে এই পরিস্থিতির একটা সুস্থ্য সমাধান বার করা। বারবার আলোচনা পরিস্থিতি তৈরীর পরও ভেস্তে যাচ্ছে। নবান্ন এবং কালিঘাট দুই ক্ষেত্রেই আলোচনা ভেস্তে যায় আলোচনা চলাকালীন লাইভ স্ট্রিমিং এর দাবি না না মানার কারণে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত ডাক্তারদের ধর্ণা মঞ্চে পৌঁছে যান আলোচনায় বসার দাবী নিয়ে। তিনি বলেন, আমি এখানে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয় তোমাদের একজন বড় দিদি হিসেবে এসেছি, এভাবে রাস্তায় পড়ে থেকোনা'।
তবে দীর্ঘদিন যদি এভাবে অচলাবস্থা চলতে থাকে তবে হসপিটাল গুলোতে মৃত্যু মিছিল বাড়তে থাকবে। তখন অবশ্যই এই মৃত্যুর দায় ডাক্তারদের ঘাড়ে পড়বে। এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় সকলে খেয়াল করে থাকবেন বেসরকারী হসপিটাল বা নার্সিং হোমে রীতিমতো কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে মোটা টাকার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তবে সরকারের তরফ থেকে যতটা নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে অবশ্যই ডাক্তার দেরও নমনীয়তা দেখাতে হবে, তানা হলে হয়তো এই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে জনগণ পথে নামতে বাধ্য হবে।
যে ডাক্তার একজন রোগীর সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে এই পেশায় প্রবেশ করেন, সেই ডাক্তার যখন একজন কসাইয়ের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়, কই তখন তো ডাক্তার সম্প্রদায়কে কোন কথা বলতে দেখি না। যদিও এই বক্তব্যের সাথে আরজি কর কান্ডের কোন যোগ নেই। আমাদের দেশে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা পরিসেবা। রোগি দেখার ফী ইচ্ছে মত করে চলেছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ লিখে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন খাওয়া, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট লিখে রোগীর ভালো চিকিৎসার নামে নিজের চুক্তি করা ল্যাবরেটরিতে পাঠানো। এসবই এখন এদেশের ডাক্তারদের রীতিতে পরিণত হয়েছে।
তবে অবশ্যই মৌমিতা দেবনাথের অপরাধীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি কার্যকর করা হোক এটা আমরা সকলেই চাই। পাশাপাশি ডাক্তাররা তারা কাজে ফিরুক এটাই চাই। অবশ্যই আমাদের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা আছে।
COMMENTS