News Brief: কোলকাতা Waqf (Amendment) Bill, 2024 ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে কলকাতায় মুসলিম নেতারা গোটা দেশে মুসলিমদের লক্ষ লক...
News Brief: কোলকাতা
Waqf (Amendment) Bill, 2024
ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে কলকাতায় মুসলিম নেতারা
গোটা দেশে মুসলিমদের লক্ষ লক্ষ একর ওয়াকফ সম্পত্তি আছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই সম্পত্তি নিজদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য নতুন বিল আনতে চলেছে। এই বিলের বিরুদ্ধে বৈঠকে বসেছেন মুসলিম নেতৃত্ব।
প্রত্যয় অনলাইন ডেস্ক:
কেন্দ্র সরকারকে অবিলম্বে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার করতে হবে। এই লক্ষ্যে সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন বৈঠক করছে এবং বিলের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। জামাআতে ইসলামী হিন্দের তরফে ইতিমধ্যে ওয়াকফ সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটি জেপিসি-র চেয়ারম্যান সাংসদ জগদম্বিকা পালের সঙ্গে বৈঠক করে জোরালো আপত্তি জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেপিসি-র সকল সদস্যের সঙ্গে আলাদা করে সাক্ষাত করে মেমোরেন্ডাম দেওয়া হচ্ছে। সব রাজ্যেই এই প্রক্রিয়া চলছে। পশ্চিমবঙ্গে জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল জেপিসি সদস্য সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নাদিমুল হকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল ওয়াকফ সুরক্ষা কনফারেন্স। এতে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা সকলেই অবিলম্বে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে গর্জে উঠলেন। উপস্থিত ছিলেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহিম মুজাদ্দেদী, বোর্ডের মুখপাত্র ড. কাশেম রসূল ইলিয়াস, বোর্ডের সদস্য মাওলানা আবু তালিব রহমানী, জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি ডা. মসিহুর রহমান, জমিয়তে উলামার নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, ক্কারী শামসুদ্দিন, মহ. কামরুজ্জামান, শিয়া আলেম মাওলানা মেহদী হাসান, পার্সোনাল ল' বোর্ডের সদস্য সাবুহী আজীজ, উযমা আলম, ড. নীলম গাজালা প্রমুখ।
মুসলিম পার্সোনাল ল' বোর্ডের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ড. কাশেম রসুল ইলিয়াস বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল সম্পূর্ণভাবে মুসলিম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্র। এই বিল শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়; শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এমনকি দলিত, আদিবাসীদের জন্যও ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক। একে রুখতে না পারলে মুসলিম-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের প্রশ্ন দেখা দেবে। তাই ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিলের বিরোধিতা করে নিজ নিজ মোবাইল থেকে জেপিসি-কে মতামত পাঠান। ২৫ কোটি মুসলমানের মধ্যে অন্তত ১০ কোটি আপত্তি জানালে বিলটি খারিজ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। ইতিমধ্যেই ১ কোটিরও বেশি আপত্তি জেপিসি-তে পাঠানো হয়েছে। তিনি এও জানান, ৮ আগস্ট লোকসভায় বিল পেশ করা হয়। পরদিন ৯ আগস্ট বিলটি তড়িঘড়ি করে জেপিসিতে পাঠানো হয়। ২৮ আগস্ট জেপিসি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে জনগণের মতামত চেয়েছে। এই সময়সীমা বাড়িয়ে অন্তত একমাস করার দাবি জানান তিনি।
ড. ইলিয়াস আরও বলেন, কথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো যেন চূড়ান্ত সময়ে পার্লামেন্ট থেকে ওয়াক আউট না করে, সেটা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীতিশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডু, চিরাগ পাসোয়ান, জয়ন্ত চৌধুরী প্রমুখ নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। উল্লেখ্য, এই দলগুলো কেন্দ্র সরকারের জোটে থাকলেও এরা সংসদের অধিবেশনে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করেছে। আর এই চারটি দলকে সহমতে আনতে পারলেই মুসলিম বিদ্বেষী ওয়াকফ বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে নরেন্দ্র মোদি। মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গেও বৈঠকের জন্য পার্সোনাল ল' বোর্ডের তরফে বৈঠকের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগেও ওয়াকফ ইস্যুতে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় কেন্দ্র সরকার বাধ্য হয়ে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেখানে ১০ বছর কেটে গিয়েছে, সুরাহা হয়নি। কোন সম্পত্তি ওয়াকফ করতে হলে প্রথম শর্ত হল সেই ব্যক্তিকে অন্তত ৫ বছর আগে থকে মুসলমান পরিচিতি থাকতে হবে। তাহলে কেন্দ্র সরকার কীভাবে এই বিলে ওয়াকফ বোর্ডে দু'জন অমুসলিমকে সদস্য করার পক্ষে সওয়াল করতে পারে – সে প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
ল' বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানী বলেন, ওয়াকফ বিল সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী এবং কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। এই বিল এনে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকার। তাই আমরা যদি এখনও জেগে ঘুমাই, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব বড় রকমের প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়বে। ওযাকফ সম্পত্তি আমাদের হাতছাড়া হলে বা কেন্দ্র সরকার এর পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করলে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, ঈদগাহ থেকে শুরু করে ওয়াকফ সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত সেবামূলক বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাঁর কথায়, ওয়াকফ এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়, যা মুসলমানদের ঈমানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
পার্সোনাল ল' বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান মুজাদ্দেদী বলেন, এই বিল খতরনাক। দেশের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে। যেগুলো মুসলমানদের জাতির সেবায় দান করে গিয়েছেন। প্রতিরক্ষা এবং রেলের পর সবথেকে বেশি জমিন রয়েছে ওয়াকফের হাতে। তাই মোদি সরকার এই বিপুল সম্পদ-সম্পত্তিকে কুক্ষিগত করতে সচেষ্ট হয়েছে। এজন্য সাধারণ মানুষকে এই বিলের পক্ষে আনার লক্ষ্যে 'দুর্নীতি'কে অজুহাত করা হয়েছে। ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে নাকি দুর্নীতির বাসা বেঁধেছে। সেই ঘুঘুর বাসা ভাঙতেই ওয়াকফ সংশোধনী বিল। অথচ এটা আইওয়াশ মাত্র। আসল লক্ষ্য হল, ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিমদের কব্জা থেকে কেড়ে নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র পরিচিতি বিনষ্ট করা। এটা মুসলমান তথা সমস্ত সংখ্যালঘুদের জন্য খুব বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, বিজেপি তথা এনডিএ জোটে একজনও মুসলিম এমপি নেই। অথচ তারা বারেবারেই মুসলিমদেরকে ইস্যু বা টার্গেট করে চলেছে। এটা আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা।
সবশেষে ল' বোর্ডের সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানী বলেন, আজ কলকাতা থেকে এই কনফারেন্স শুরু হল। এবার সব রাজ্যের রাজধানী এবং বড় বড় শহরে এই কনফারেন্স হবে। এটা আমাদের ইমানী তাকাজা। ওয়াকফ হল আল্লাহর নামে উৎসর্গকৃত সম্পত্তি। যা থেকে সাদকায়ে জারিয়াহ হয়। এটা ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আমাদের এটা রক্ষা করতে হবে।
COMMENTS