রম্যরচনা: প্রত্যয় সাহিত্য পরকীয়া: আধুনিক প্রেমের ফাঁদ না পুরনো পাপের নতুন সংস্করণ? প্রতিদিন ভাঙছে ঘর কতশত। একটা মহামারীর মতো দ্রুত ছড়িয়...
রম্যরচনা: প্রত্যয় সাহিত্য
পরকীয়া: আধুনিক প্রেমের ফাঁদ না পুরনো পাপের নতুন সংস্করণ?
প্রতিদিন ভাঙছে ঘর কতশত। একটা মহামারীর মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে একজনের থেকে অন্য জনের মধ্যে। খুব কাছের মানুষকে একমুহুর্তে দুরে ঠেলে দিয়ে উদ্যাম সুখের খোঁজে অন্যকারো হাতে হাত রাখা। কোর্ট এটাকে অপরাধ বলে মনে করে না। দুটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাধীনতার মর্যাদা দিতে গিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের মনের অবস্থার বিচার কোর্ট করতে পারল? এ প্রশ্ন সকলের।
লিখেছেন রাকিবুল ইসলাম
বারাসাতে পাঁচ মাসে ৫০০ গৃহবধূ পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে সংসার ছেড়েছেন। সাম্প্রতিক এই খবরটা বেশ ভাইরাল হচ্ছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আসার পর থেকে বিষয়টা ভাইরাসের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতীয় সমাজে যখন কোনো সিরিয়ালের কোন পর্বে নায়িকা হঠাৎ তার প্রেমিকের বন্ধু বা স্বামীর বসের প্রেমে পড়ে যায়, তখন বাড়ির মহিলারা বলেন, ' ছিঃ! ছিঃ! কী বেহায়া দেখেছ!' অথচ সেই সিরিয়াল দেখা আর সোস্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট তৈরি করা গৃহবধূদের অনেকেই লিপ্ত হচ্ছে পরকিয়ায়।
দুঃখের বিষয়, যেটা এক সময় কেবল সিনেমা বা সিরিয়ালে দেখা যেত, এখন সেটাই বাস্তবে ঢুকে পড়েছে—ফেসবুক ইনবক্স থেকে অফিস ক্যান্টিন, ওয়ার্ক ট্রিপ থেকে "ওই তো আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড"—সবখানেই পরকীয়ার স্নেহস্পর্শ।
পরকীয়া কেন বাড়ছে?
এ প্রশ্ন করলে অনেকেই বলেন—
“আমার জীবন একঘেয়ে, তাই একটু রোমাঞ্চ চেয়েছিলাম।”
“স্ত্রী আমাকে বোঝে না, আর সে তো বোঝে—ও-ই তো আমার মনের মানুষ।”
কেউ কেউ তো বলেন, “সবাই করছে, আমিই বা বাদ যাব কেন?”
আবার অনেক মহিলা আছেন যারা বলেন, "আমার স্বামী আমাকে বোঝে না, কিছুটা মানসিক শান্তি পায় ওর কাছে।"
এমনও দেখা গেছে—বিয়ের আগে প্রেম, বিয়ের পরে প্রেম, আর মাঝেমধ্যে সিঙ্গেলদের সঙ্গে ফ্লার্ট—এ যেন অলিম্পিক ইভেন্ট!
ভারতের অনেক শহরে এখন ডেটিং অ্যাপ গুলোর বিজ্ঞাপনেই লেখা থাকে—“বোরিং ম্যারেজ? নতুন কাউকে খুঁজুন!” একদিকে আইন আছে পরকীয়াকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করার (২০১৮ সালে সেকশন ৪৯৭ বাতিল হয়েছে), কিন্তু নৈতিকতা আর সম্পর্কের জগতে এই "স্বাধীনতা" যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবারের ভিত নড়ছে:
ভারতীয় সংস্কৃতিতে পরিবার ছিল এক অটুট বন্ধন। যৌথ পরিবার, মা-বাবার সম্মান, সন্তানের প্রতি দায়িত্ব—সবই ছিল পরিবারকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন, রাত ১০টার পর “কলিং বেল” বাজে কাউকে ফোনে, আর স্বামী বা স্ত্রী বলে—“ওহ! বসের কল। অফিসিয়াল!”
বাচ্চারা এখন দেখে, মা ফোনে হাসছে, আর বাবা মুখ গোমড়া করে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করছে। কিশোর বয়সে তারা শিখে নেয়—প্রেম মানেই গোপনতা, সম্পর্ক মানেই সন্দেহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে পরকীয়া:
ইসলামে পরকীয়া (অর্থাৎ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক) গুরুতর পাপ হিসেবে চিহ্নিত। আল্লাহ বলেন:
“আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” 📖 সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৩২
হাদীস শরীফে এসেছে—
“কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করে, তখন তার ঈমান তার বুক থেকে বেরিয়ে যায়...।” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)। ইসলাম শুধু নিষেধ করেনি, বরং বিকল্পও দিয়েছে—
সুন্দর দাম্পত্য জীবন গঠনের উপদেশ
স্ত্রীকে ভালোবাসা ও সম্মান করার নির্দেশ
শালীন দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্দার বিধান
নিজের চাহিদা পূরণের বৈধ ও সুন্দর উপায় করে দিয়েছে।
ইসলাম ব্যভিচারের যেমন কঠিন শাস্তির বিধান করেছে, তেমনি স্বামী-স্ত্রী সুসম্পর্কে খুবই পূণ্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। মহান সৃষ্টিকর্তা সুখী দাম্পত্য জীবনের মধ্যে কল্যাণ রেখেছেন।
সমাধান কী?
খোলামেলা সংলাপ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে খোলা মনে আলোচনর মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা। প্রচলিত কথা আছে 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে', এটা ঠিক নয়। সংসার সুখের হয় পারস্পরিক ত্যাগের মধ্যদিয়ে। সেজন্যে একজন বা দুজন মানুষ নয় একাধিক মানুষ, পিতা-মাতা, ভাই-বোন এবং সন্তান-সন্ততি নিয়ে তৈরি হয় একটা পরিবার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমা নির্ধারণ: "ফ্রেন্ডশিপ" শুরু হয় ইনবক্সে, শেষ হয় কোর্টে। তাই ভার্চুয়াল সম্পর্কের গণ্ডি স্পষ্ট করা জরুরি। স্বামী স্ত্রীর ফেসবুকের গোপন আইডি খুলে নতুন বন্ধু তৈরির প্রবণতা অপরাধ বলে মনে করতে হবে।
ধর্মীয় চর্চা: নিয়মিত নামাজ, কুরআন পাঠ এবং আত্মজিজ্ঞাসা অনেক ভুল থেকে রক্ষা করে। পরকাল মুখী মুখী জীবন মুক্তি দিতে পারে পরকীয়ার মতো ঘৃণ্য ব্যাধি থেকে।
নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন: স্বামী হলে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন "যা করছি, সেটা যদি আমার স্ত্রী বা সন্তান জানত, তাহলে আমি লজ্জা পেতাম কি না?" কিংবা "যদি আমার স্ত্রী এমন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তবে আমার মানসিক অবস্থা কেমন হবে?"
তেমনি স্ত্রী হলে ঐ একই প্রশ্ন নিজেকে করুন।
আজকাল পরকীয়া যেন একটা ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হয়ে গেছে। কিন্তু পরিণতি যখন আসে—তখন ফেসবুক থাকে না, ইনস্টাগ্রামের ‘লাভ রিয়াক্ট’গুলোও আর বুক গরম করে না। তখন কেবল চোখে জল আর মনে আফসোস—“ভুল করেছি!”
দেখাগেছে পরকিয়া সম্পর্কে যারা একবার যুক্ত হয়েছে তাদের বারবার সঙ্গী বদল করতে হয়েছে, "যেন মনে হয়েছে হেথা নয়, হোথা নয় অন্য কোথাও'। এটা তাদের ক্ষেত্রে রোগে পরিণত হয়েছে।
সুখ খুঁজুন ঘরে, নয়তো বাইরের সম্পর্ক আপনাকে করে তুলবে অসুখী একজন পথহারা মানুষ। কথায় আছে, "সংসার করো সন্তুষ্টি দিয়ে, সম্পর্ক গড়ো সত্য দিয়ে।"
COMMENTS